এম, এ কাশেম
বিশেষ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম :
বিগত ২০১১ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশের অতিত এক নজিরবিহীন কালো অধ্যায়/ট্রাজেডির দিন আজ ১১ জুলাই।
ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মতো এমন একটি দিন আজ দোরগোড়ায় হাজির অথচ, সরকার, প্রশাসন, সামাজিক সংগঠন সহ সবাই যেনো ভুলে যেতে বসেছে।
ঘটনার দিন কতো শতো নারী-পুরুষের চোখের পানি যে ঝরেছিলো তা লিখে বুঝানো যাবে না। এ দিনটি কে বিশেষ একটি দিন মনে করে দেশের প্রায় সংবাদ পত্র গুলো অন্য কিছু কে প্রাধান্য না দিয়ে অধিক গুরুত্ব সহকারে প্রাধান্য দিয়েছিলো মীরসরাইয় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এক সাথে কোমলমতি ছাত্র সহ ৪৩ জনের প্রাণ সংহারের ঘটনাটি। পত্রিকা গুলোর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সহ পুরো পাতা ও দখলে রাখতে দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু, এখন? তা আর নেই!
সরকারি প্রশাসনের তোড়জোড় ও ছিলো দেখার মতো। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলো আলাদা আলাদা ভাবে পালন করতো বিভিন্ন কর্মসূচি। কিন্তু, সময়ের ব্যবধানে আজ যেনো সব কিছু-ই নিথর হয় গেছে!
কিন্তু, সবাই ভুলে গেলে ও ভুলতে পারেনি অকালে জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়া কোমলমতি ছাত্রদের জন্মদাত্রী মা ও জন্মদাতা বাবা এবং ভাই-বোনরা।
ঘুরে ফিরে সেই একটি দিন ১১ জুলাই আসলে এখনো চোখের পানি ঝরে তাদের। মুহুর্তের মধ্যে পরপারে পাড়ি জমানো ওই সব কোমলমতি ছাত্রদের এক-ই এলাকা হওয়ায় পুরো গ্রাম জুড়ে রাত গভীর কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে পথ চলাচলরত: সবার কর্ণকুহরে।
আর কেউ না হলে ও এখনো কাঁদে, কাঁদছে এবং কাঁদবে ও মা-বাবা, ভাই-বোনরা।
ঘটনার দিন ছিলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ও জন্মদাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নাম করন ‘বঙ্গমাতা-বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা। আর ওই মীরসরাই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ফাইনাল খেলায় অংশ নিয়েছিলো মীরসরাই উপজেলার আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয় এর ছাত্র খেলোয়াড়রা। তাদের সমর্থন জানাতে এবং খেলা দেখতে এক-ই বিদ্যালয় থেকে মীরসরাই স্টেডিয়ামে এসেছিলো ওই সব ছাত্ররা।
খেলায় বিজয় লাভ করে উক্ত আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়। আর নিজেদের বিদ্যালয় বিজয়ী হওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উক্ত ছাত্ররা স্টেডিয়াম থেকে মিছিল বের করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে উঠে একটি মিনি পিক-আপে ঠাসাঠাসি করে চড়ে ফির ছিলো গন্তব্যস্থল বাড়ি এলাকার। কিন্তু, প্রতি মধ্যে বাড়ির অদুরবর্তী স্থান বড়তাকিয়া – আবু তোরাব সড়ক (গ্রাম্য সড়ক) এর ছৈদালী নামক স্থানে পৌঁছা মাত্র-ই পিক-আপটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে রাস্তার পাশের একটি নর্দমা সম্বৃদ্ধ ডোবায় পড়ে গেলে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে মুহুর্ত্বের মধ্যে কয়েক জনের মৃত্যু ঘটে। ঘটনার আওয়াজ শুনতে পেয়ে আশপাশের নারী-পুরুষরা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে থাকা হতাহতের উদ্ধার করার অবিরাম চেষ্টা চালায়। কিন্তু, ততোক্ষণে কয়েক জনের মৃত্যু ঘটে। মৃত ব্যাতীত আহত হওয়া বাকিদের দ্রত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে ও আরো কয়েকজন মারা যায়। এর পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মারাত্মক আহত আরো কয়েকজন কে ঢাকা স্থান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে ছাত্রদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা দাড়ায় ৪২ জন।এ ছাড়া তাদের সাথে থাকা আরো ৩ জন ও মারা যায়। সব মিলিয়ে মোট ৪৫ জন মৃত্যু বরণ করে।
তথ্যসূত্র মতে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ইতিহাসে একক ঘটনায় এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনা।
স্থানীয় প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে মৃতের সংখ্যা ৪৫ বলে ঘোষণা করেছিলেন।
আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়, আবু তোরাব প্রাইমারি স্কুল এবং আবু তোরাব ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্ররা উচ্চ ফুটবল ম্যাচ দেখে বাড়ি ফির ছিলো, যখন সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর সাদেক সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন, নিহতদের মধ্যে ২৮ জনই তার স্কুলের ছাত্র, এবং আরও কয়েকজন খুব মেধাবী ছিলো। দুর্ঘটনার আগে মোঃ মফিজুর রহমান নামের ওই ট্রাক চালক বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন এবং মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন বলে জানা গেছে। তৎ সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা , সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া , সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরী , শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফসারুল আমিন চৌধুরী, যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা ও দিয়ে গিয়েছিলেন তারা।
নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৩ জুলাই শোক দিবস পালন করে এবং ১২ জুলাই থেকে উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তিন দিনের শোক কর্মসূচি পালন করে।