নিজস্ব প্রতিনিধি :
কিশোরগঞ্জ এর ভৈরব উপজেলায় অবস্থিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি জান্নাত রেস্টুরেন্ট এন্ড রিসোর্টের দখলে। প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে ঢেকে পড়েছে ভবনের মূল নাম ফলক। এই নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মনে প্রশ্ন উঠেছে। এতে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক মুক্তিযোদ্ধা।
ভৈরব উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাঁড়া দেওয়ার কথা। আর তৃতীয় তলায় হওয়ার কথা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দাপ্তরিক কার্যালয়। কিন্তু ভবনটিতে এর কোনোটিই হয়নি। পুরো ভবনে চলছে একটি রেস্টুরেন্ট এন্ড রিসোর্ট ।
১০ বছরের চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে জান্নাত রেস্টুরেন্ট এন্ড রিসোর্ট এর দ্বিতীয় শাখার সেখানে এমনভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে যে, দেখে মনে হয় পুরো ভবনটিই তাদের দখলে। রিসোর্ট প্রতিষ্ঠানটি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ভবনের কিছু অংশ পরিবর্তনও করেছেন। তাদের ব্যানার-সাইনবোর্ডে ঢাকা পড়েছে ভবনের সামনের নাম ফলকের।
২০২৩ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে তাতারকান্দি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়।
এর আগেই মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ৯ জুন সারা দেশের উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ভাড়া ও ব্যবহার সম্পর্কিত একটি পরিপত্র জারি করেছিল। পরিপত্রে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের তৃতীয় তলায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় তলা দোকানের জন্য ভাঁড়া দেওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠানের অমর্যাদা হয় এমন কোনো কাজে ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না। তবে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে জান্নাত রেস্টুরেন্ট এন্ড রিসোর্টের জন্য ভাঁড়া দেওয়া হয়েছে পুরো ভবনটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভৈরব উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনের অংশ ও সীমানা প্রাচীর এমনভাবে সাজানো হয়েছে দেখে মনে হচ্ছে একটি জান্নাত রেস্টুরেন্ট এন্ড রিসোর্টের নিজস্ব ভবন। ভবনের সামনের পুরো অংশই রিসোর্টের নাম সংবলিত বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা তালওয়াত হোসেন বাবলা বলেন, আগের ইউএনও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে মৌখিক চুক্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি রেস্টুরেন্ট এন্ড রিসোর্টের জন্য ভাঁড়া দেন। এখন রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ কমপ্লেক্সটিতে যেভাবে সাইনবোর্ড ও দেয়াল লিখন করেছে তাতে বোঝার উপায় নেই এটি রিসোর্ট না মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স।
ভৈরব জান্নাত রেস্টুরেন্ট এন্ড রিসোর্টের সত্বাধিকারী মোশারফ হোসেন মিন্টু ফোনে বলেন, ১০ বছরের চুক্তিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবনটি রিসোর্টের জন্য ভাড়া নিয়েছি। ভবনটিতে ১৩টি আধুনিক ডিজাইনের রুম করা হয়েছে। রিসোর্টের সাইনবোর্ডে যদি ভবনের নাম ফলক ঢেকে যায় তাহলে নতুনভাবে বড় করে সাইনবোর্ড তৈরি করে দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন জানান, সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কমিটির মাধ্যমে নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ফলকের সাইনবোর্ডে যদি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নাম ফলক ঢেকে যায় তাহলে এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
উক্ত বিষয়ে ভৈরব মুক্তিযোদ্ধার ডেপুটি কমান্ডার ফরহাদ আহমেদ বলেন, জান্নাত হোটেল এন্ড রিসোর্ট এর স্বত্বাধিকারী মোশাররফ হোসেন মিন্টু যে নাম ব্যবহার করেছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। আর আমার জানামতে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান সবুজ এর মাধ্যমে উক্ত বিল্ডিং এর নিচ তলা ও দুতলা ভাড়া দেওয়া হয় কিন্তু তিনতলা মুক্তিযোদ্ধাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য রাখা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারলাম মিন্টু তিন তলাও ব্যবহার করছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আজিজুল হক ফাহিম, বার্তা সম্পাদক : মোঃ সাইদুর রহমান
সম্পাদকীয় কার্যালয় : কাটাবাড়িয়া মোড়, কিশোরগঞ্জ। মোবাইল নাম্বার : 01716-132929,
Email: anusandhanibarta@gmail.com
অনুসন্ধানী বার্তা: কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত