কিশোরগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সেচ প্রকল্পের বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপনের জন্য ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন মো. বাচ্চু মিয়া নামের এক কৃষক। তিনি এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-১ এ মামলার অভিযোগ দিয়েছেন। গত ২৯ শে জানুয়ারি আদালতে মামলার অভিযোগ দায়েরের পর বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগ – তদন্ত করে আগামী ২৯শে এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এলাকা পরিচালক ও সভাপতি তারেক কামালকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী কৃষক মো. বাচ্চু মিয়া জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের আলমদীপাড়া গ্রামের – মো. তাহের উদ্দিনের ছেলে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের নানশ্রী মৌজায় কৃষক মো. বাচ্চু মিয়া তার পৈতৃক মালিকানাধীন জমিতে সেচ প্রকল্পের বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির করিমগঞ্জ জোনাল অফিসে ২০২৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর অর্থগ্রহণের রশিদসহ একটি দরখাস্ত দেন। দরখাস্তটি করিমগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আখতারুজ্জামান গ্রহণ করেন। দরখাস্তের আলোকে গত ২০শে ডিসেম্বর সরজমিন তদন্ত করে স্টেকিং শিট তৈরি করা হয়। এর আগে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আখতারুজ্জামানের পরামর্শ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৯ই জানুয়ারি উপজেলা সেচ কমিটির কাছ থেকে অগভীর সেচ যন্ত্রের লাইসেন্স সংগ্রহ করেন কৃষক বাচ্চু মিয়া। এ ছাড়া তাকে একটি ট্রান্সফর্মারও কেনান ডিজিএম আখতারুজ্জামান। মো. বাচ্চু মিয়া তার ট্রান্সফর্মারটি পরীক্ষার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ১৭২৫ টাকা জমা দেন এবং জমিতে একটি অগভীর নলকূপ স্থাপন করেন। কিন্তু ডিজিএম আখতারুজ্জামানের পরামর্শ অনুযায়ী দরখাস্ত জমা দিলে অজুহাত দেখান এবং একপর্যায়ে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ডিজিএম আখতারুজ্জামানকে কৃষক বাচ্চু মিয়া ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দেয়ার পর তিনি আবেদনপত্রের প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে স্বাক্ষর করে ফাইলটি কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকারের কাছে পাঠান। পরবর্তীতে জিএম ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকারের সঙ্গে বাচ্চু মিয়া যোগাযোগ করলে তিনিও ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। কৃষক বাচ্চু মিয়া ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানালে জিএম ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার কৃষক বাচ্চু মিয়ার ফাইল থেকে সেচের ছাড়পত্র খুলে রেখে ফাইলটি ফেরত দেন। এ ব্যাপারে ডিজিএম মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জিএম ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকারকেও ঘুষ দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে গত ২৪শে জানুয়ারি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিশোরগঞ্জ সদরের মুকসেদপুর অফিসে ডিজিএম মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে গিয়ে জিএম ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকারের সঙ্গে কথক বাচ্চু মিয়া আলোচনা করেন। তখনো জিএম ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। এসময় ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জিএম ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার ও ডিজিএম মো. আখতারুজ্জামান উভয়েই সেচের বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হবে না বলে তাকে জানিয়ে দেন। এ পরিস্থিতিতে কৃষক মো, বাচ্চু মিয়াসহ প্রায় ৮০ জন কৃষকের প্রায় ২০০ কানি জমি সেচের অভাবে পতিত পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া সেচের নানা যন্ত্রপাতি ও ঘুষ দেয়াসহ কৃষক মো. বাচ্চু মিয়ার প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঘুষ দাবির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, অভিযোগকারী কৃষক মো. বাচ্চু মিয়া কোনোদিন আমার অফিসেই আসেননি। তার সঙ্গে আমার জানাশোনাও নেই। তাই তার কাছে। ঘুষ দাবি করার অভিযোগ একেবারেই অবান্তর। মূলত একটি চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে আমাদের বিরুদ্ধে মনগড়া ও কাল্পনিক অভিযোগ করছে।